আব্দুল মান্নান : নিজেদের স্বার্থে হিন্দুস্তানীরা দলমত নির্বিশেষে এক এবং প্রয়োজনে একাকার হয়ে যায়। বাহির থেকে মনে হয় বিজেপি এবং কংগ্রেস সম্পর্ক শাপ-নেউলে কিন্তু নিজ দেশের আগ্রাসী স্বার্থেও ওরা এক ছাতার নীচে চলে আসে। এটা কারো অজানা নয় । আদর্শিক ভিন্নতা থাকা সত্বেও প্রণবের বার বার এদেশে আগমন এবং কূটচাল প্রণয়ণে মোদী কিন্তু ঠিকই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। সেটা তাদের দেশের স্বার্থের অনুকূলে বলেই। আর আমরা কোন স্বার্থে ও গুলো বগল দাবা করছি সেটা শুধু একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া কে জানেন ?
প্রতিবেশী সব দেশের সাথেই ভারতের একই রকমের মোড়লীপনা আচরণের ঘৃণ্য স্বভাব। আর সেটা নেপাল বুঝেছে , শ্রীলংকা বুঝেছে, মালদ্বীপ ও বুঝেছে। যতদিন বুঝতে পারেনি ততদিন তারাও এক চরম অভ্যন্তরীণ অশান্তির ভোগান্তিতে ছিলো । বুঝতে পেরেই সবদিক থেকে এসব দেশ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য শান্তি শৃঙ্খলায় রয়েছে ।
ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ । উপমহাদেশে একমাত্র দেশ বাংলাদেশই যুদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভ করা দেশ। বোধ বুদ্ধি জ্ঞান বিবেক এবং আত্মমর্যাদার দিক থেকে এই বাংলাদেশকেই এগিয়ে থাকার কথা ছিলো। অথচ রূঢ় বাস্তবতা হলো সম্পূর্ণ উল্টো। আমরা যেন ভুলে গেছি লক্ষ শহীদের রক্ত ঋণের কথা। আমাদের অতীত বীরত্ব র কথা। আর তা বেমালুম ভুলে বসে তাঁবেদার করছি ভারত নামের এক চরম আগ্রাসী এবং ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক দেশের। কোন অজ্ঞাত কারনে ভারতকে যেন দেশের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক বানিয়ে দিয়েছি । সব কিছুই যেন এখন তাদের আজ্ঞাবহ নতজানুতায় নূয্য । আমাদের নির্বাচন, ক্ষমতায়ন,নীতিনির্ধারণ,শান্তি শৃঙ্খলা,ব্যবসা চাকুরি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, এমন কি ধর্ম পালন সহ সবই মনে হয় নিয়ন্ত্রিত ঘুড়ি হয়ে ভারতের নাটাইয়েরই টানে উড়ে এবং পড়ে। বিশেষ করে গত এক দশক ধরে এ অবস্থার প্রকটতা আমরা অস্থিমজ্জায় টের পাচ্ছি। ইদানিং আরো এক ধাপ এগিয়ে তার বিষ ছায়া এসে পড়েছে আমাদের স্বাধীনতার উপর । এখন ভারতের নীতি নির্ধারণী লেবেল থেকেও আমাদের স্বাধীনতার উপর হুমকি ছোঁড়া হচ্ছে। আমাদের দুর্বলতাটা কি, কেন যে আমরা শেয়ালের গর্ত থেকে বের হয়ে হায়েনার গুহার দিকে দৌড়াচ্ছি, এর সঠিক উত্তর কোথায় পাবে আজকের এই উপদ্রুত বাংলাদেশ ?
আমরা পরাধীন কাশ্মীর দেখছি ,পরাধীন হায়দারাবাদ দেখছি,পরাধীন সিকীম দেখছি,তাঁবেদার ভূটান দেখছি, এবং নিজ মেরদন্ডের উপর দাড়ানো নেপাল শ্রীলংকা মালদ্বীপ দেখছি। এদের আগেপরের সার্বিক অবস্থান পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনায় নিয়ে আমাদের করণীয় রূঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রয়োগ করে এক্ষূনিই দলমত নির্বিশেষে দেশের স্বার্থে জাতির স্বার্থে সঠিক পথ বেছে নেয়া অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে ।